জাবের হোসেন, ফটিকছড়ি প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি মহাসড়কে অক্সিজেন টু ফটিকছড়ি চলিত জনপ্রিয় বাহন “চট্টলা চাকা এক্সপ্রেস” নামক এসি বাস পরিবহনটি হঠাৎ বন্ধের নেপথ্যে ঘটনা উদঘাটন নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।
২০২২ সালের মাঝামাঝিতে ফটিকছড়িতে প্রথম বারের মত যাত্রা শুরু করেছিল এই “চট্টলা চাকা এক্সপ্রেস ” নামের এসি বাসটি। শুরু থেকেই এই বাসের সঠিক ব্যবস্থাপনা, বাসের সৌন্দর্য্য, নিয়ম শৃঙ্খলা, যাত্রীদের মাঝে চমৎকারভাবে সাড়া ফেলেছে।
এরি ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ দিন ধরে সুনামের সাথে এই বাস পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু বিগত জুলাই বিপ্লব ৫ আগষ্ট এর পর চট্টগ্রাম নাজিরহাট খাগড়াছড়ি বাস মালিক সমিতি পক্ষ থেকে বাসের নিবন্ধন অনুমোদন ইত্যাদি অভিযোগ এর প্রেক্ষিতে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কিছু দিন চলার পর আবারো প্রায় দুই মাস পর এই বাসটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই কারণ সম্পর্কে এই এসি বাস মালিকের এর প্রতিনিধি হিসেবে জনাব শাহজাহান বলেন ” আমি দীর্ঘ দিন ধরে প্রায় ২০০৩ সাল থেকে এই বাস সার্ভিসের ও সমিতির সাথে জড়িত। আমরা প্রথমে ৩ জন মিলে ৪ টা বাস নিয়ে এই এসি বাসের যাত্রা শুরু করি। মানুষের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে আরো কয়েটি বাস মাঠে নামাই সাথে আরো কয়েকজন ইনভেস্টর আমাদের সাথে যুক্ত হয়।
এরপর ও আমরা আমাদের যাত্রীদের যতাযথ সেবার মান, নিয়ম শৃঙ্কলা, সৌন্দর্য্য বজায় রাখার প্রেক্ষিতে আমারা যাত্রীদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়ে আসছি। কিন্তু বিগত ৫ আগষ্টের পর কিছু স্বার্থউন্মেষি মহলের প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। তারা গাড়ি নিবন্ধন, অনুমোদন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলে। আমার কাছে বিআরটিএ অনুমোদনকৃত সব ডকুমেন্টস আছে।
এটা কোন ইস্যু না আসলে প্রধান ইস্যু হলো নন এসি বাস মালিকরা মনে করছে আমাদের এসি বাসের কারণে তাদের যাত্রী হচ্ছে না, তারা বাসে গাদাগাদি করে আগের মত যাত্রী তুলতে পারছে না, আগের তুলনায় যাত্রী ও কমে গেছে। আমাদের সুশৃঙ্খল সেবা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দেখে তারা ঈর্ষান্মিত হয়ে আমাদের উপর চড়াও হয়েছে।
তাদের এই বাধা বিপত্তি ও এসব প্রতিহিংসা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা এক পর্যায়ে এসব এসি বাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু আমরা অল্প সময়ে আমাদের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, সুষ্ঠু পরিচালনার কারণে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে আস্থা ও প্রবল আগ্রহ তৈরি করেছি। তাই তারা এটি পুনরায় চালু করার জন্য দাবী তুলেছে।
এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি জাতীয় নাগরিক কমিটির আহব্বায়ক বিশিষ্ট ব্যাংকার জনাব মো: একরামুল হক বলেছেন “ফটিকছড়ি টু অক্সিজেন চট্টলা চাকা এসি বাস সার্ভিসটি ফটিকছড়ি হতে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়তকারী যাত্রীদের জন্য একটি আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হিসেবে জনগণের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ছিলো।
বিশেষ করে ফটিকছড়িতে কর্মরত সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য সঠিক সময়ে অফিসে পৌছানো ও অফিস শেষে বাসায় ফেরত আসার একটি চমৎকার সার্ভিস হিসেবে আস্থা অর্জন করেছিলো।
তিনি আরো বলেন, ৫ অগাস্টের পর এ সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে এ রোডে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম বিপাকে পরে। এই সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ননএসি ও লোকাল সার্ভিসের বাসগুলো যাত্রীদের সাথে খেয়ালখুশি মতো ভাড়া নির্ধারণ ও সময়ক্ষেপণ করে গন্তব্যে পৌঁছাতে কোন নিয়মনীতি মেনে চলছে না।এতে করে যাত্রীদের কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে ও বেশীসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করার কারনে দূর্ঘটনা ও বাড়ছে।
যাত্রীদের সার্বিক সমস্যা বিবেচনা করে প্রশাসন ও বাস মালিক সমিতি এই সার্ভিসটি পূণরায় চালুর করার উদ্যোগ গ্রহন করে জনগণের ভোগান্তি কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ কে জাতীয় নাগরিক কমিটি, ফটিকছড়ি উপজেলা শাখার পক্ষ হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
একটি বিষয় মনে রাখা উচিত জনগণই এদেশের মালিক। জনগণকে ভোগান্তিতে রেখে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করলে তার জবাব জনগণই দিবে।
এই ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তর জেলা সংগঠক আকিব হাসান মাহি বলেন ” ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের সর্বস্তরের সংষ্কার চলছে তারই ধারাবাহিকতায় ফটিকছড়ি জনসাধারণের স্বার্থে, জনগণের ভোগান্তি দূর করার লক্ষ্যে চট্টলার চাকা এক্সপ্রেস এসি বাসটি মাঠে চায়, এর জন্য আমারা প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছে, তারা যদি আমাদের দাবী মেনে নেই তাহলে আমার এই কর্মসূচি উইথড্র করবো। নাহ হয় কঠোর কর্মসূচি বহাল থাকবে।
এই ব্যাপারে ফটিকছড়ি জামায়াতের আমির জনাব নাজিম উদ্দিন ইমুকে প্রশ্ন করলে তার জবাবে তিনি বলেন, ৫ আগষ্ট এর পর এই বাস কিছুদিন বন্ধ ছিল, এর পর এটা আবার চালু হয়, এর পর আবার কি কারণে বন্ধ হয় জানি না, তবে শহরগামী যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে এটি পুনরায় চালু হওয়া অতন্ত্য জরুরি। এই বিষয়ে সমধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি আমার সাথে যোগাযোগ করেছে, এটা নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনায় বসবো।
এই ব্যাপারে ফটিকছড়ি বিএনপির সদস্য সচিব জহির আজম বলেন, চট্টলার চাকা এক্সপ্রেস অতন্ত্য চমৎকার বাস সার্ভিস। কিন্তু এই বাস হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ কি আমি জানি না। তবে এই বাসের ব্যবস্থাপনা প্রসংশার দাবীদার। কারণ অন্যান্য লোকাল বাস গুলো তে উঠলে যাত্রীরা অনেক হয়রানি হয়, তাদের ব্যবহার টিক নেই, পথে পথে যাত্রী তুলে তারা অনেক ভোগান্তি তে ফেলে। তার তুলনায় এসি বাস অনেক ভালো। আমি শীগ্রই এটিকে রাস্তায় চায়।
এই ব্যাপারে এসি বাসের একজন নিয়মিত যাত্রী বিশিষ্ট ব্যাংকার জনাব ইলিয়াস হোসেন বলেন” এই এসি বাস চালু হওয়ার এটি আমাদের ফটিকছড়িবাসীর ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছ, উত্তর চট্টগ্রামে ক্লোস ডোর এসি বাস সার্ভিস হিসেবে এটাই প্রথম বাস সার্ভিস যা উন্নত সেবার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
যারা ব্যক্তিগত গাড়ি এফোর্ড করতে পারে না তাদের জন্য এটি অতন্ত্য চমৎকার বাহন। যা আমাদের ফটিকছড়ি বাসীর আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, ও মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেছে। এটা কেন বন্ধ হয়েছে জানি না কিংবা এটার মালিক কে বা কারা সেটা ও আমার জানার বিষয় না তবে আমি একজন সাধারণ যাত্রী হিসাবে আমি চায় এই গাড়ি পুনরায় চালু হোক। ফটিকছড়ি সকল মানুষ এটা এখন প্রানের দাবী যে, এই বাস আবার চালু করে মানুষের সকল ভোগান্তি কাটিয়ে স্বস্তিতে, স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করুক এটাই ফটিকছড়িবাসীর প্রত্যাশা।