শেকৃবি প্রতিনিধি:
আধুনিক কৃষিতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ই-কৃষি ক্লিনিক আয়োজিত দুই মাসব্যাপী প্ল্যান্ট ডক্টর কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪:৩০টায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কনফারেন্স রুমে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোর্সের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ অনুষ্ঠানে বিশেষ ভূমিকা রাখে ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড।
সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে দুপুর ২টায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য ফিল্ড ট্যুর আয়োজন করা হয়, যেখানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ঢাকা কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের (এটিআই) শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এতে শিক্ষার্থীরা মাঠ পর্যায়ে উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, নিরাপদ কৃষি চর্চা এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেকৃবির প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. বেলাল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ই-কৃষি ক্লিনিকের এডভাইজার ও শেকৃবির উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ, ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেডের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক তৌহিদ ইসলাম এবং ই-কৃষি ক্লিনিকের চীফ অপারেটিং অফিসার কৃষিবিদ আফরা নাওয়ার।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ই-কৃষি ক্লিনিকের চীফ এডভাইজার ও শেকৃবির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোঃ সোলায়মান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কৃষিবিদ মোঃ মেরাজ হোসেন।
অনুষ্ঠানে ই-কৃষি ক্লিনিকের চীফ এডভাইজার ড. সোলায়মান এবং এডভাইজার অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়া শেকৃবির অনামিকা আক্তারকে ‘বেস্ট ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর’ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. বেলাল হোসেন বলেন,
“কৃষিতে ইন্টার্নশিপ অত্যন্ত জরুরি। ই-কৃষি ক্লিনিক সে অভাব পূরণের চেষ্টা করছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমরা ইন্টার্নশিপ চালুর উদ্যোগ নিয়েছি, আশা করি শীঘ্রই এটি বাস্তবায়ন করা হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে ড. সোলায়মান বলেন,
“তরুণরা চাকরি করবে নাকি চাকরি দেবে, সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে। ই-কৃষি ক্লিনিকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের দক্ষ করে তুলছে এবং অন্যদের জন্য সুযোগ তৈরি করছে, যা কৃষি খাতে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ।”
ই-কৃষি ক্লিনিকের কো-ফাউন্ডার কৃষিবিদ মোঃ মমিন সরকার জানান, “দক্ষ কৃষিবিদ গড়ে তুলতে বড় বাধা হলো ইন্টার্নশিপের অভাব। এতে শিক্ষার্থীরা চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে এবং কৃষক পর্যায়েও পর্যাপ্ত সেবা পৌঁছাচ্ছে না। তাই পাবলিক ও প্রাইভেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এটিআই শিক্ষার্থীদের জন্য এ কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই দুই মাসব্যাপী কোর্সে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের ৩৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ কোর্সে ১৪টি ফসল, বালাইনাশক ব্যবস্থাপনা, সার প্রয়োগ, গ্লোবাল গ্যাপ ও নিরাপদ কৃষি চর্চা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১২ জন দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।”
কৃষিতে ইন্টার্নশিপের অভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাদের কর্পোরেট চাকরি ও মাঠ পর্যায়ের বাস্তব কাজ উভয় ক্ষেত্রেই পিছিয়ে দিচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ‘প্ল্যান্ট ডক্টর কোর্স’ চালু করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা অনলাইন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সরাসরি মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে একদল তরুণ কৃষিবিদের নেতৃত্বে ‘ফসল আপনার, দায়িত্ব আমাদের’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ই-কৃষি ক্লিনিক। নিরাপদ কৃষি চর্চা ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। প্ল্যান্ট ডক্টর কোর্সসহ নানাবিধ উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে ই-কৃষি ক্লিনিক।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?