বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতা এমরান সালেহ প্রিন্স দুলু সম্প্রতি এক বক্তব্যে দাবি করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের ক্ষমতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
তার মতে, ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতা রক্ষার জন্য আপস করেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ইস্যু হয়ে আছে। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
এরপর একাধিকবার আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি।
বিএনপি নেতা দুলুর দাবি, শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নামে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং, তিনি নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ভারতকে তুষ্ট করার নীতি গ্রহণ করেছেন, যা বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
দুলু বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার রক্ষা না করে শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে এমন একটি সম্পর্ক তৈরি করেছেন, যেখানে আমাদের জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বাংলাদেশের কৃষি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের ছাড় দিচ্ছে, কিন্তু আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কোনো দৃঢ়তা দেখাচ্ছে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার বিনিময়ে তিস্তার চুক্তি না করেই ভারতকে সন্তুষ্ট করেছেন।”
তিস্তা নদীর পানি সংকট বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষক ও সাধারণ মানুষের জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটের কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, যা খাদ্য উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অপরদিকে, বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে, যা ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়।
বিএনপি মনে করে, সরকার কৌশলগতভাবে দুর্বল অবস্থান নেওয়ার কারণে বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুলু বলেন, “শেখ হাসিনা যদি জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতেন, তাহলে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি অনেক আগেই সম্পাদিত হতো। কিন্তু তিনি ভারতের কাছে তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখার বিনিময়ে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছেন।”
দুলু বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার ভারতের সঙ্গে ন্যায্য চুক্তি করুক। দেশের জনগণের অধিকার নিশ্চিত না করে ক্ষমতা ধরে রাখার মানসিকতা থেকে বের হতে হবে।”
তিনি তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, জনগণের ভোটাধিকার ও ন্যায়সংগত দাবি রক্ষা করা না হলে, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।