পর্দা করে ক্লাস করা ও পরীক্ষা দেওয়ায় এক ছাত্রীকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আইন বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী নিপা আক্তার পর্দা করায় নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া হেনস্তার বিষয়টি তুলে ধরেন।
‘আছিস যত চাটুকার, শিক্ষা গুরুর পোশাক ছাড়। স্বৈরাচারের আস্তানা এই ক্যাম্পাসে হবে না। স্বৈরাচারের আস্তানা আইন বিভাগে হবে না। এমন নানা প্রকার স্লোগান ও বিভিন্ন প্রকার প্লেকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নেন।
মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, উনি আমাকে আমার পর্দা নিয়ে অনেক হ্যারাস করেছে। ভার্সিটির প্রথমদিকে আমি শুধু হিজাব পরতাম। পরে আমি নিকাব পরা শুরু করি। একদিন আমি ওই শিক্ষকের কাছে হলের সিটের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে পর্দা নিয়ে অনেক কথা শোনায়। আমার এ অবস্থা কেন, আমার বিয়ে হয়েছে কি না। আমাকে কিন্তু এইভাবে কোর্টে এলাউ করবে না। এভাবে বিভিন্ন ধরনের কথা শোনান।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন পরিক্ষা দিচ্ছিলাম তখন তিনি আমাকে অনেক অপমান করেন। তিনি আমাকে বলেন, তোমার প্রবেশপত্রে যে ছবি দেখা যাচ্ছে এখন লজ্জা করে না? মুখ খুলতে কীসের লজ্জা। আরো অনেক কথা বলে আমাকে অপমান করেন এবং তিনি আমার খাতায় সাইনও করতে চাননি।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী নোবিপ্রবি বিএমএস বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ বিন খলিল বলেন, পরীক্ষার হলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া একটি মেয়েকে পর্দা করায় নাম জিজ্ঞেস করে বলে, এভাবে আমি সাইন দিব না। তুমি নেকাফ না খুললে আমি কীভাবে বুঝবো তুমি আমার বিভাগের মেয়ে। পরে এ নিয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে বাদশা মিয়া আমাকে কল দিয়ে পোস্ট ডিলিট করতে বাধ্য করে।
মানববন্ধনে ভুক্তোভোগী ছাত্রীর সহপাঠী অর্পিতা দাস বলেন, নিপার সঙ্গে দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বাদশা স্যার অস্বাভাবিক আচরণ করত। এর কারণ হচ্ছে সে মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী পর্দা করতে শুরু করে। পরীক্ষার হলে এবং ভাইবা বোর্ডেও সে ধর্ম অনুযায়ী পর্দা করত। কিন্তু বাদশা স্যার সেখানে তাকে মানসিক যন্ত্রণা দিত শুধু পর্দা করার কারণেই।
অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে কাউকে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। অর্থাৎ সে জায়গায় হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রিস্টান প্রত্যেক ব্যক্তি সে তার স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। কারো কোনো অধিকার নেই সে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার। সে জায়গায় আমাদের নিপা যদি চায় সে তার ধর্মীয় মোতাবেক চলাফেরা করবে, সে জায়গায় কোনো শিক্ষকই কোনোভাবেই অধিকার নেই তাকে হেনস্তা করার। আমরা চাই না এমন কোনো ঘটনা নোবিপ্রবিতে আর না হোক।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়া বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে বলেন, আমি পরীক্ষার হলে খাতায় স্বাক্ষর করার সময় শুধু তার নাম জিজ্ঞেস করেছি। ব্যক্তিগতভাবে তাকে আমি ভালো করে চিনি না এবং তাকে পর্দা নিয়ে কোনো কথা বলিনি।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?