মো:তানসেন আবেদীন, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকটি ম্যুরাল ও স্থাপনা ভাঙচুর করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। নির্মাণ শ্রমিকদের ডেকে হাতুড়ি, শাবল দিয়ে এসব ভাঙচুর করা হয়।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নেতৃত্ব দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্যসচিব অ্যাডভোটেক আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
ভাঙচুর চলাকালীন সেখানে আদালতের একজন সরকারি আইন কর্মকর্তাকেও (পাবলিক প্রসিকিউটর) দেখা যায়। তিনি বিএনপি সমর্থক।
গতরাতে রাজধানী ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার ধারাবাহিকতায় এই ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ নগরীতে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর সকল স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে এগারোটর দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পরে তারা নির্মাণ শ্রমিকদের খবর দেন।
বেলা বারোটার দিকে বড় আকারের হাতুড়ি, শাবল নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকরা পৌঁছালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভাঙা শুরু করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হেসেন খান ও আবু আল ইউসুফ টিপু নিজেও শাবল ও হাতুড়ি দিয়ে ম্যুরাল ভাঙা কার্যক্রমে অংশ নেন।
এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আবক্ষ ভাস্কর্যটিও ভাঙা হয়।
পরে পাশে জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনের দু’টি ম্যুরালও একইভাবে ভাঙা হয়। যদিও এ ম্যুরালগুলো গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। এক দফায় ভাঙচুরও চলে তখন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবির, আইনজীবী সমিতি ও সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া, মহানগর বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা।
জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জাকিরকেও সেখানে দেখা যায়।
এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলার ‘বঙ্গবন্ধু কর্নারেও’ ভাঙচুর চলে। সেখানে থাকা ছবি ও ফটোফ্রেম ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুরের এক পর্যায়ে ভাঙা কাঁচে আঘাতও পান আবু আল ইউসুফ টিপু।
ভাঙচুর চলাকালীন পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসেনি।
সাংবাদিকদের সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘(শেখ মুজিবের) এইসব ছবি দিয়ে আওয়ামী লীগ পবিত্র বিচারাঙ্গণকে কলুষিত করেছে। এই ম্যুরালের দোহাই দিয়ে প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশে বিপ্লব সাধিত হয়েছে এবং এখন দেশে নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং এখন প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন প্রশাসন ও বিচারবিভাগকে কলঙ্কিত কাউকে করতে না পারে সেজন্য নারায়ণগঞ্জের সাধারণ আইনজীবীরা এইসব ছবি অপসারণ করেছে। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত নারায়ণগঞ্জ চাই।’
আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘গতকাল দেখেছেন শেখ মুজিবের ৩২ নম্বরের বাড়ি ভেঙেছে জনগণ। আমরা তারই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল বা ছবি ভেঙে দিচ্ছি। এটি নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। যেখানে যেখানে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবের কোনো ছবি বা স্মৃতিচিহ্ন আছে সবগুলো ভেঙে ফেলা হবে।’
বিকেলে শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পৈত্রিক বাড়ি বায়তুল আমান ভাঙার কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির এ নেতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘আমি একটি প্রোগ্রামে সকালেই আড়াইহাজারের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাই। ঘটনার সময় আমি সেখানেই ছিলাম। বিষয়টি সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবগত নই। এ সম্পর্কে খোঁজখবর করার পর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’