আক্কাছ আলী (মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি):
আলু উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জ।এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে এই জেলার ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে এর চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড় ১০ লাখ মেট্রিক টন।মানুষের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই দিগন্তজুড়ে শুধু আলুর আবাদ। দেখে মনে হয় সবুজের গালিচা।
তবে মুন্সীগঞ্জে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী কৃষিপণ্যে সরকার থেকে মূল্য সহায়তার সুযোগ থাকলেও বাস্তবে এর বাস্তবায়ন নেই। এতে বেকায়দায় পড়ছেন কৃষকরা। ফলে তাদের ক্ষোভ বাড়ছে। তাদের দাবি, অবিলম্বে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হোক।
জমিতে সেচন দেয়া, কীটনাশক স্প্রে ও আগাছা পরিষ্কার নানা কাজে কৃষকের ভীষণ ব্যস্ততা এখন। একই সঙ্গে জমি থেকে তোলা হচ্ছে আগাম জাতের আলু। এদিকে এই আলু নিয়ে মধ্যসত্ত্বভোগীদের আগ্রাসন ঠেকাতে ১২০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। হিমাগার ব্যবস্থাপনাও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।কিন্তু টাকার অভাবে সংরক্ষণ না করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে অনেকটা পানির দামে জমি থেকেই বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। এবার বীজ ও সারের চড়া দরের কারণে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। ভাল দাম না পাওয়ায় মাথায় হাত কৃষকের।
কৃষকরা জানান ৭০০ টাকা কেজি দরে বাক্স আলু রোপণ করে এখন পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। টাকার অভাবে আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারছে না কৃষক। এই সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির মজুদদার।বর্তমানে খুচরা বাজারে ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। আর জমিতে ১২ থেকে ১৩ টাকা। কৃষকের অভিযোগ, এ সুযোগে মধ্যসত্ত্বভোগীরা সস্তায় আলু কিনে হিমাগারে রেখে চড়া দরে বিক্রি করবে।
গেল মৌসুমে সংরক্ষণ করা আলুর দর ওঠে ৮০-৯০ টাকা পর্যন্ত। কৃষি বিভাগ বলছে, মধ্যসত্ত্বভোগীদের এই আগ্রাসন ঠেকাতে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১২০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষক এনআইডি দিয়ে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে পারবে।
তবে কোন ব্যবসায়ীকে আলু সংরক্ষণ করতে হলে লাইসেন্স লাগবে। সংরক্ষণ দলিল হাত বদলের ব্যাপারে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জে ৬৪ হিমাগের মধ্যে সচল ৫৮ হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম বলেন , ‘জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে মার্চের ৩১ তারিখ পর্যন্ত এই তিন মাসের মধ্যে আমাদের টার্গেট হচ্ছে, সব হিমাগারকে একটা ডাটাবেজের আওতায় নিয়ে আসা। ডাটাবেজ বলতে তাদের তথ্যটা যেমন আজকে কতটুকু আলু খালাস করছে, তার সঠিক তথ্যটা যাতে আমরা পাই।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য আমরা হোয়াটসঅ্যাপে একটা গ্রুপ খুলব। যা প্রতিদিনের তথ্যটা আমাদেরকে দিবে। কারণ আপনারা জানেন মুন্সীগঞ্জ কিন্তু একক জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি হিমাগার রয়েছে। প্রায় ৬৪টি। এতগুলো হিমাগারে প্রতিদিন যাওয়া সম্ভব না। তবে তারা যদি প্রতিদিন তথ্যটা দেয় তাহলে সহজ হবে। এটা আমাদের প্রথম উদ্যোগ। হিমাগারের মালিকের যে প্রতিনিধি আসবে তাদেরকে আমরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করে নেব এবং তাদের লাইসেন্স নিশ্চিত করা হবে।
এই কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে কোল্ডস্টোরেজের মালিকদের সহায়তায় কোন কোন ব্যবসায়ী কোল্ডস্টোরেজে ব্যবসা করেন তাদের একটা তালিকা করা। তালিকা করার পর আমাদের কাজ হবে ব্যবসায়ীদেরকে লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা।’
তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জে কোনো কোল্ডস্টোরেজের ব্যবসায়ীই কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে কোন লাইসেন্স করেনি। এতে সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। রাজস্ব যাতে সংগ্রহ করা যায় আমরা তাদের লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসব। আমরা নিশ্চিত করব কোল্ডস্টোরে যে লাইসেন্স ছাড়া যাতে কেউ আলু না রাখতে পারে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘আলু উৎপাদনে মুন্সীগঞ্জ শীর্ষ একটি জেলা। এ জেলায় গত বছরের চেয়েও এ বছর ৪০০ হেক্টরে বেশি আলুর রোপণ করা হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যে আলু উত্তোলনের ভরা মৌসুমে শুরু হবে। এখন পর্যন্ত ফসলের অবস্থা ভালো। পোকামাকড় রোগবালাইয়ের আক্রমণ এখন পর্যন্ত সেভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আলুর বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যার মধ্যে বীজ আলু ও খাবার আলু আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে বলেছি। আলুর বাজারমূল্য ঠিক রাখার জন্য যাতে সরকারিভাবে আলু ক্রয় করা যায়, সে বিষয়ে আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি।