সাব্বির হোসেন, লালমানিরহাট
চলতি বছরে বৃহত্তর রংপুর বিভাগের লালমনির হাট জেলায় তামাক চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কৃষকরা তামাকের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে উৎসাহ বোধ করছেন এবং গত কয়েক বছরের চেয়ে দ্বিগুণ মুনাফা পেয়েছেন মজুতদার গনও।
এদিকে তামাক বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে কৃষকদের কে তামাক চাষে নিরুসাহিত করছেন। এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে তামাক চাষে কৃষকদের বিরত থাকার প্রয়াস ব্যক্ত করছেন। তামাক চাষের বিরুদ্ধে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেও কৃষকদের তামাক চাষ থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না। আবার কার্যকর কোন নিষেধ না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
এই সুযোগে কোম্পানিগুলো কৃষকদেরকে অগ্রিম টাকা-পয়সা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধি দিচ্ছে। ফলে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা তামাক চাষের দিকে ঝুকছেন। এতে করে পরিবেশ দূষণ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি মারার পাশাপাশি এই অঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে, এই অঞ্চলে উৎপাদিত মোট তামাকের ৭০ শতাংশ উৎপাদিত হয় লালমনিরহাট জেলায় পাশাপাশি রংপুরের বেশ কিছু জেলা আছে।
লালমনিরহাটের কৃষক আসিফ উদ্দিন (৫৫)বলেন, “গতবার তিনি চার বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন। এ বছর তিনি আরো বেশি জমিতে তামাক চাষ করতে চাচ্ছেন। কারণ গেলোবার খুবই মূল্যবৃদ্ধি হয় এবং তিনি ধারণা করছেন এ বছর তামাকের দাম আরো বেশি হবে।”
আর একজন কৃষক আনোয়ার পাশা তিনি বলছেন, “তামাকের দাম ৬০০০ টাকা কাটা থাকে। কিন্তু এবছর তাদের ১৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।”
বেসরকারি সমীক্ষায় জানা যায়, এই অঞ্চলে ০৭ টি তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থাকেন। মৌসুমে প্রতিটি কোম্পানি ৬০-৮০ লাখ কেজি তামাক কিনে থাকেন। কৃষকদের বিনামূল্যে বিষ সার কীটনাশক এবং সুদ মুক্ত ঋণ সুবিধা দেওয়া বন্ধ না করা গেলে তামাক চাষ বন্ধ করা যাবে না ও পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিবে।
লালমনিহাট জেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মোঃ সাইখুল আরিফিন জানান, “বিধি নিষেধ না থাকায় তামার কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই এবং তামার উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে আসছে।”
খাদ্য শস্য উৎপাদনের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে উঠেছে। তামাক চাষের বিষয়ে কৃষি বিভাগ কেবল তামাক চাষের ক্ষতিকারক দিকগুলো কৃষকদের কাছে তুলে ধরছে কিন্তু এতে কোন কাজ হচ্ছে না। তামাক গাছের শিখর মাটির গভীর পর্যন্ত থাকে। এ কারণে তামা গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। তামাক গাছের খাদ্য নিশ্চিত করতে কৃষক জমিতে প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করে। যার ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়, পরবর্তীতে ওই জমিতে অন্য ফসল এর ফলন কমে যায়। তামাক চাষ মাটির জন্য যেমন ক্ষতিকর পরিবেশের জন্য তেমন ক্ষতিকর। তামাক চাষের কারণে কৃষক পরিবারের সদস্যরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভোগে থাকবেন থাকেন।