মজনুর রহমান আকাশ, মেহেরপুরঃ
শুখসাগর পেঁয়াজ এবার দু:খের হাতছানি দিচ্ছে মেহেরপুরের কৃষকদের। মানহীন কোম্পানীর মার্সাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লিঃ এর নিম্নমানের য়োকরাল নামক বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) পেঁয়াজ ক্ষেতে ব্যবহার করায় পেঁয়াজ গাছের কলি হলুদ হয়ে চুপসে যাচ্ছে। ডগা শুকিয়ে লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে।
কৃষকরা জানান, স্থানীয় সার কীটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে য়োকরাল নামক এই ছত্রাকনাশক (পেস্টিসাইড) তাঁদের জমির উঠতি পেঁয়াজের পঁচন রোধে দিয়েছিলেন। এটি ব্যবহারে জমির পেঁয়াজ খেত এখন জমিতেই লুটিয়ে পড়েছে। পেঁয়াজ গাছের কলি হলুদ হয়ে চুপসে যাচ্ছে। ডগা শুকিয়ে লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে। এবারের শীত মৌসুমে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন মুজিবনগর উপজেলার নাজিরাকোনা, শিবপুর, ভবরপাড়া, কেদারগঞ্জ, মানিকনগর গ্রামের অর্ধ শতাধিক কৃষক। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শে পেঁয়াজের ছত্রাকজনিত রোগ থেকে বাঁচতে মার্সাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লিঃ এর নিম্নমানের য়োকরাল নামক বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) প্রয়োগের পরেই এ অবস্থা হয়েছে পেঁয়াজ ক্ষেতের।কৃষকের মতে, প্রায় অর্ধশত বিঘা জমির পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতি হতে পারে।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার নাজিরাকোনা গ্রামের পেঁয়াজ চাষী আবুল হোসেন জানান, বর্গা নেওয়া এক বিঘা জমিতে চাষ করছেন পেঁয়াজ। জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে পেঁয়াজ খেত ছত্রাকজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীর পরামর্শে মার্সাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লিঃ এর য়োকরাল নামক বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এর পর থেকেই হলুদ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে পেঁয়াজ ক্ষেত। এমন অবস্থায় তিনিঅসহায় হয়ে পড়েছেন ।
তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে তার ৮০/৯০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। ধার দেনা করে এক বিঘা জমিতে এই চাষ করেছিলেন। পেঁয়াজ বিক্রি করে এবছর তার প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা হতো অথচ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চরম বিপদের মধ্যে আছেন তিনি।
কয়েকজন চাষি জানান, এই বছর নাজিরাকোনা গ্রামের আফর আলী এক বিঘা জমিতে, আব্দুল আলীমের এক বিঘা জামিতে হাফিজুল ইসলামের এক বিঘা জমিতে অ্যাডভোকেট আব্দুল আলীমের এক বিঘা জমিতে, শহিদুল ইসলামের এক বিঘা জমিতে, জনি মন্ডলের ৫ বিঘা জমির পেঁয়াজের মধ্যে ২ বিঘা জমিসহ এই গ্রামের প্রায় ১৫ জন কৃষকের প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে এই ছত্রাক নাশক কীটনাশকটি প্রয়োগ করে সব পেঁয়াজ ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
শিবপুর গ্রামের কৃষক হিরন আলী জানান, ধারদেনা করে আবাদ করা জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব কৃষক। এখন ওই কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চান তারা। কৃষকদের অনেকই স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা যদি মাঠে আসতেন, পরামর্শ দিতেন, তাহলে এই অবস্থা হতো না।
এদিকে কীটনাশক কোম্পানির নাজিরাকোনা গ্রামের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুল জুব্বার জানান, মার্সাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লি: এর য়োকরাল ব্যবহারের পর এ রকম অভিযোগ আসছে সব জায়গা থেকে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে, ওই কোম্পানীর স্থানীয় ডিলার ও কোম্পানীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা মাঠে এসে কৃষকদের ফসলের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতি পুরণ দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মার্সাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লি: এর টেরিটরি অফিসার আসাদুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে এলাকার ২০ জান কৃষক তাঁদের ৩৩ বিঘা জমির পেঁয়াজ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানালে কোম্পানীর প্রধান কার্যালয় থেকে কয়েকজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পেঁয়াজ চাষীয়দের সাথে কথা বলেছেন এবং পেঁয়াজের স্যাম্পল পরিক্ষার জন্য নিয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না।কোন চাষি অভিযোগ করেনি। কৃষকরা কার পরামর্শে এসব কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ করে থাকে এটা তার অজানা। কীটনাশক দোকান পরিদর্শন করে মাসে অন্তত দুটি নমুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ে (প্লান্ট প্রটেক শন) পাঠানোর কথা সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের, এটা পাঠানো হয় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাব দেন নি তিনি।