শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
৩ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

সারাদেশ

‘ঘরবাড়ি ফালাইয়া আইছি বানের জলে, খাওন যায় না পেটে’

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:৫৮

‘ঘরবাড়ি ফালাইয়া আইছি বানের জলে, খাওন যায় না পেটে’

‘দেখতে দেখতে বাইত পানি উইঠা গেল। ঘরের জিনিসপত্র কোনোরহমে চকির উফরে থুইয়া জীবন বাঁচাইতে এইখানে আইয়া আশ্রয় লইছি। বাড়ির চিন্তায় ঘুমে ধরে না। আউজগা আটটা দিন পরের বাড়ি পরের ঘর আমার ঘুমে ধরে না, ঘুম নাই। এহানে তিনবেলা খাওন দেয়। ঘরবাড়ি বানের জলে ফালাইয়া আইছি, আশ্রয়কেন্দ্রের এই খাওন যায় না পেটে।’

আবেগজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার দীর্ঘভূমি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি বৃদ্ধা মাফিয়া বেগম।

মাফিয়া বেগম (৭০) পার্শ্ববর্তী বুড়িচং উপজেলার জগতপুর এলাকার মৃত আবিদ আলী মুহুরির স্ত্রী।

মাফিয়া বেগম বলেন, ‘বন্যার জলে ক্ষেতের ফসল নষ্ট অইয়া গেছে। ঘরের তুলি হমান পানি। পোলাপাইনদেরও এহন কাজবাজ নাই। এহান থাইক্কা ফিরা বাড়ি গিয়া খায়াম কি? আমরার তো সব শেষ হইয়া গেল। বন্যার পানি নাইম্মা গেলে ক্ষতি হওয়া ঘরবাড়ি ঠিক করাম কেমনে? কে আমরারে সাহাইয্য করব? আল্লায় কেন আমরারে এই বিপদ দিল?’

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে দীর্ঘভূমি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে মাফিয়া বেগমের মতো আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউই মনের দিক থেকে ভালো নেই। সময়মতো তিন বেলা খাবার আর শোবার জায়গা পেলেও তাদের মন যেন পড়ে আছে বাড়িতে। কখন বন্যার পানি সরে যাবে আর কখন তারা নিজের ঠিকানায় ফিরে যাবেন সে চিন্তায় পড়ে থাকেন। একেকটা দিন তাদের কাছে যেন অনেক দীর্ঘ। সময় যেন ফুরাচ্ছে না তাদের। একইসঙ্গে বন্যা-পরবর্তী সময়ের কথা ভেবেও চিন্তামগ্ন হয়ে একা একা বসে থাকতে দেখা গেছে অনেক বানভাসি মানুষকে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম  বলেন, গোমতী নদী ও সালদা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে এ উপজেলা প্লাবিত হয়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়ই পুনর্বাসন করা হবে। তবে আমরা এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। সরকার অচিরেই হয়তো আমাদের সার্কুলারের মাধ্যমে জানাবে, এটা নিশ্চিত।

 

এ সম্পর্কিত আরো খবর