মো:ফারুক আহমেদ ঘাটাইল টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় বনের ভেতর, আবাসিক এলাকা, তিন ফসলি জমি ও বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে ওঠা ইটভাটা নিয়ে চলছে শুভঙ্করের ফাঁকি। মালিক পক্ষ লাইসেন্স না করেই উচ্চ আদারলতে রিট করে বছরের পর বছর এসব অবৈধ ইট ভাটা পরিচালনা করে আসছে।
তারা আইন না মানায় এক দিকে বনের গাছ নিধন হচ্ছে-অপর দিকে গ্রামীন রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে ভাটার মালিকরা জমির উর্বর মাটি ও পরিবেশ দূষণে ব্যাপকহারে ক্ষতি করলেও স্থানীয় প্রশাসন ঐ সব ইট ভাটার বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে খোড়া অজুহাত দেখিয়ে সু কৌশলে মালিক পক্ষকে সহযোগিতা করে চলছে।
ইট ভাটা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলায় অর্ধশতাধিক ইট ভাটা থাকলেও এ বছর ৩৮টি ভাটা ইট পূরছে। তার মধ্যে ২১টি ইট ভাটার নিবন্ধন আছে। ১৪টি ইট ভাটা চলছে শুধু হাইকোর্টের রিট করে, অবশিষ্ট ৩টি ইট ভাটা কোন আইনে চলছে তার কোন তথ্য নাই তাদের কাছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায় ইট প্রস্তত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯, ২০১৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী একটি ভাটাও স্থাপন করা হয়নি। আইনের সাথে ভাটা স্থাপনের কোন মিল নাই, তবুও মিলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র অতি সহজেই মিলছে নিবন্ধন।
বিধানে বলা আছে ইট প্রস্তত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী ৫ এর ধারায় বলা আছে বিশেষ কোন স্থাপনা, হাইওয়ে রাস্তা ও রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিম্বা অনুরূপ কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটার দূরে ইট ভাটা স্থাপন করতে হবে, ৫ (জ)তে বলা আছে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহন ব্যতিত ইট ভাটা চালু করা যাইবে না। ৪(ঙ)তে বলা আছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বানিজ্যিক এলাকায়, সিটি কর্পোরেশন, পৌর সভা বা উপজেলা সদর, কৃষি জমি ও পরিবেশ গত সংকটাপন্ন এলাকায় কোন ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, আইনের সাথে ভাটা স্থাপনের কোন মিল নাই। যার যেমন যেখানে খুশি -স্কুল কলেজ, মসজিদ মাদ্রাসা, এবং কি ঘন বসতি এলাকায় ছোট ছোট শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
২০১৩ সনের ৫৯ নং আইনের ধারা ৪এর প্রতি স্থাপনে বলা আছে, লাইসেন্স ব্যতীত ইট ভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তত নিষিদ্ধ, তবুও এসব ছাড়াই চলছে।
১২ ডিসেম্বর ধলাপাড়া বিল-জলঙ্গি বংশাই ইট ভাটা এবং রসুলপুর ইউনিয়নের লালমাটিয়া তিতাস ইট ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ভাটার চারিপাশে গাছের স্তুুপ। বিধি অনুযায়ী কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও আইন ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল
দেখিয়ে ভাটার মালিক বনের কাঠ দিয়ে ইট পুড়ছে। তাছাড়াও চলমান ৩৮ টি ইট ভাটার মধ্যে ১৮ টিই সংরক্ষিত বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ও জন বসতি পূর্ন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। এ ভাবে ৩৮ টি ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ায় যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্য দিকে ফসলি জমির মাটি গভীর করে কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। যত্রতত্র ইট ভাটা গড়ে উঠায় হাইড্রলিক ও ট্রাকের চাপে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ছোট ছোট রাস্তা অল্পদিনেই ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
১৪ জানুয়ারী লোকেরপাড়া ইউনিয়নের লোকেরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে ঘন বসতি, মসজিদ, মাদ্রাসা, সংলগ্ন এলাকায় পাকা রাস্তার ধারে এম, এস, টি ইট ভাটা হরহামেশায় চলছে। আইন লঙ্ঘিত করে ৫০ মিটারের মধ্যে আর, এস, এম ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। ঘন বসতি বাড়ীর পাশে ইট ভাটা গড়ে উঠায় ছোট ছোট শিশুদের নানাবিধ ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে ষাটোর্ধ বৃদ্ধ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইট ভাটার কালো ধোঁয়া কয়লার বিষাক্ত বাতাসে শিশু ও বয়োঃবৃদ্ধদের শারিরীক নানান সমস্যার সৃষ্টি করে এ ভাবে গ্রামে মধ্যে তিন ফসলি জমিতে আর,এস,এম ইটভাটা গড়ে উঠেছে। শিংগুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে ঘন বসতি এলাকায় পাকা রাস্তার ধারে তিন ফসলি জমিতে স্বর্ণা ইট ভাটা হরহামেশায় চলছে।
সর্বোপরি লাভবান হচ্ছে ভাটার মালিক সুবিধা নিচ্ছে প্রশাসন, অপরদিকে হাতে গননা কয়েকজন বাদে প্রায় সকলেই ভোগান্তি ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সাথে সরকারের লোকশান হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
ইট ভাটায় বনের কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমানের ভাষ্য এবিষয়ে আমি সকল ধরনের প্রয়োজনীয় ও কার্যকরি ব্যাবস্থা নিচ্ছি।
এসব বিষয়ে ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী বলেন পাহাড়ের লাল মাটি ও বনের কাঠ ইট ভাটায় না নিতে কড়া ভাষায় নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তার পরেও কেউ আইন অমান্য করে তা হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনে আমাদের সমিতি সর্ব প্রকারের সহযোগিতা করবে।
এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন ইসলাম কে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, লাল মাটি কাটা এবং বনের কাঠ ইট ভাটায় ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব অপরাধ যার সংগঠিত করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিতে এসিল্যান্ডকে সম্পূর্ণ ভাবে দিক নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে