বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে দীর্ঘ ৩৯ দিন লড়াইয়ের পর মারা গেছেন শাহরিয়ার সোহান (২৮)। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত সোহান মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের শাহ সেকেন্দার আলীর ছেলে।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নিহত সোহান ঢাকায় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে চাকরি করতো। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তাকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। সোহানের পরিবারে তার স্ত্রী, বাবা-মা ও ছোট ভাই রয়েছে।
গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকার রামপুরা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতার একটি মিছিল বের হয়। এসময় আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের সাঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কোম্পানির কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ একটি গুলি তার বুকে বিদ্ধ হয়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে শরীরে আটকে থাকা গুলি বের করতে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যতে পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত সোহানের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে তার মরদেহ দেখতে যান। বুধবার সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেল ৫ টায় শ্রীপুর পূর্বপাড়া ঈদগাহ ময়দানে জানাযা নামাজ শেষে শ্রীপুর পূর্বপাড়া সম্মিলিত কবরস্থানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন হবে।
নিহতের বাবা শাহ সেকেন্দার আলী বলেন, আমার ছেলের অনেক বড় স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে অনেক বড় চাকরি করবে। সংসারে অভাব অনটনের জন্য সে লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরি করতো। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে এখন আমরা কিভাবে বাঁচবো?
নিহতের নানা শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব আশরাফ হোসেন পল্টু বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি ওষুধ কোম্পানিতে সে চাকরি করতো। পুরো সংসার তার উপর নির্ভরশীল ছিল। এখন তাদের পরিবার কিভাবে চলবে? একটি গুলিই তাদের সব শেষ করে দিল। ছোটবেলা থেকেই সোহান নম্র, ভদ্র, সদালাপী এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী।