জামালপুরের কর্মস্থল থেকে ছুটিতে নেত্রকোণার দুর্গাপুরে গ্রামের বাড়ি গিয়ে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম। নিহত পুলিশ কর্মকর্তার মা ফাতেমা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন,বিচার চাই গো আমি আর কিছু চাই না গো আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।
কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন পুলিশের এসআই শফিকুল ইসলাম(৪৫)। পুলিশের এই সদস্য জামালপুরের পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন ।
নেত্রকোণার দুর্গাপুরে শফিকুল ইসলাম তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এবং পরদিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ময়মনসিংহের ভাড়া বাসায় উঠার কথা ছিল। কিন্তু এই সফরই হয়ে উঠল তার জীবনের শেষ সফর। পরিবার ও এলাকাবাসী শোকাহত এবং এই নির্মম হত্যার বিচার চান। নিহত শফিকুল ইসলামের বাবা রফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা ৬ জনকে আসামী করে দুর্গাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
ঘটনার ২৪ ঘন্টা পার হলেও এখনো কেনো আসামী গ্রেপ্তার হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার(৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাজার করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হওয়ার পর দুর্গাপুর পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকায় পান মহালের গলিতে বেশ কয়েকজন দুস্কৃতিকারী দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপালে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে ওই দিন রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি । শুক্রবার(১০আগষ্ট) দুপুরে উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে তার মরদেহ পৌঁছলে সেখানে স্বজনদের মাঝে শুরু হয় শোকের মাতম। এলাকাবাসির মাঝেও দেখা দেয় শোকাবহ পরিবেশ। বিকালে গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হয়।
নিহতের ছেলে রাফিউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার আমাকে নিয়ে ময়মনসিংহ যাওয়ার কথা ছিলো আব্বুর কিন্তু আব্বু ময়মনসিংহ গেল ঠিকই ফিরলো আমাকে এতিম করে। আমি দোষীদের এমন বিচার চাই যেনো আমার মত এতিম যেনো আর কেউ না হয়।
নিহত পুলিশের এস আই শফিকুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন বলেন,২৪ ঘন্টার মধ্যে আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্ত এখনো কেউ গ্রেপ্তার হলো না আমরা খুবই হতাশায় আছি৷
স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কখনো এ পরিবারের এমন আচরণ দেখিনি যে তাদের শত্রু থাকবে এলাকায়। আমরা কল্পনা করতে পারিনি এমন একটি ভালো ছেলেকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে। আমরা এ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
নোয়াগাঁও গ্রামের রমজান আলী বলেন, অত্র এলাকার মধ্যে কারো সাথে কেনোদিন শফিকুলের মনোমালিন্য হয়নি৷ সে অত্যন্ত সৎ ও ভালো ছেলে ছিলো। আমরা শফিকুলের মতো একজন ভালো মানুষকে এলাকা থেকে হারালাম। আমরা চাই এ খুনের সঠিক তথ্য বের হউক।
একই এলাকার নিহত পুলিশ শফিকুলের শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, সে যখন এসএসসি পরীক্ষা দিযেছিলো তখন আমি তাঁকে পড়িয়েছি। আমার জানামতে এলাকায় তার সাথে কারো কোন ঝগড়া নেই। তাঁকে নৃশংসভাবে ভাবে হত্যা করা হয়েছে । আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার চাই।
নোয়াগাঁও এলাকার জামাই শামছুল আলম খান বলেন, সবাই আসলে হতবাক একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তাকে এভাবে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে সেখানে তো সাধারণ মানুষের তো কেনো নিরাপত্তা নেই। দুর্গাপুরবাসী,এলাকাবাসী ও সকল শান্তপ্রিয় মানুষের দাবী অতি দ্রুত আসামীদের সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম আযাদ শুক্রবার বিকেলে নিহতের বাড়ি চন্ডিগড় ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে যান এবং নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে জানাজায় অংশ নেন। এ সময় তিনি জানান অতি শীঘ্রই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হবে এবং
দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।