লালমনিরহাট উত্তরবঙ্গের সবজি ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর এই অঞ্চলের কৃষকরা নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন। তবে এবারের মৌসুমে লালমনিরহাটের কৃষকরা ফুলকপির দাম কমে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে মাত্র দেড় থেকে ২ টাকা দরে, যা কৃষকদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। কৃষকরা বলছেন, এই দাম দিয়ে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং অনেক কৃষক তাদের জমিতেই ফুলকপির ফসল নষ্ট করে ফেলছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষক মো. আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা যে পরিমাণ টাকা খরচ করে ফুলকপি চাষ করেছি, তার অর্ধেকও বিক্রি হচ্ছে না। খরচের টাকা উঠছে না, ফলে বাধ্য হয়ে জমিতেই ফসল নষ্ট করে ফেলছি।” তিনি আরও জানান, “ফুলকপি চাষে সময়, পরিশ্রম ও অর্থ সব কিছুই ব্যয় হয়, কিন্তু দাম না থাকায় সঠিক মূল্য পাই না।”
এদিকে, কৃষি অধিদপ্তর এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে সরবরাহ বেড়ে গেছে, তবে চাহিদা তেমন বাড়েনি। এজন্য ফুলকপির দাম কমে গেছে।” তারা আরও বলেন, “এটি একটি মৌসুমি ব্যাপার, যা প্রতিনিয়ত ঘটে। তবে আমরা কৃষকদের সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছি।”
কৃষকরা অভিযোগ করছেন যে, মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের ফসলের সঠিক মূল্য পেতে দেয় না এবং তারা বাজারে ফুলকপির দাম বাড়ানোর জন্য কিছুই করেন না। এর ফলে কৃষকরা বেশি পরিমাণে লোকসান করছেন।
এছাড়া, বাজারে ফুলকপির দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে অতিরিক্ত উৎপাদন এবং চাহিদার কমতি উল্লেখ করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, “যেহেতু ফুলকপি চাষে অনেক কৃষক আগ্রহী, তাই উৎপাদন বেড়ে গেছে, কিন্তু চাহিদা তেমন বাড়েনি। এর ফলে দাম পড়ে গেছে।”
এ পরিস্থিতিতে, কৃষকরা সরকার থেকে বিশেষ প্রণোদনা এবং সহায়তা চান, যাতে তারা তাদের ফসলের সঠিক মূল্য পেতে পারেন এবং উৎপাদন খরচ পূরণ করতে সক্ষম হন। তারা আরও বলেন, “যদি এই সমস্যা সমাধান না হয়, তাহলে আগামীতে কৃষি খাতে আরও বেশি ক্ষতি হবে।”
ফুলকপির দাম কমে যাওয়ার এই পরিস্থিতি লালমনিরহাটের কৃষক সমাজের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আশা করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তারা যাতে তাদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পায়, সেই জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।