শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
৩ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

সারাদেশ

লালমনিরহাটে ছিটমহল বাসির জীবনযাপন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৪

লালমনিরহাটে ছিটমহল বাসির জীবনযাপন

১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের বিভক্তির সময় থেকে ছিটমহলের সমস্যা শুরু হয়। যদিও দুটি দেশই স্বাধীনতা লাভ করেছিল, কিন্তু ছিটমহলগুলো সঠিকভাবে বিভাজিত হয়নি। এদের মধ্যে বাংলাদেশে ভারতের ১১১টি ছিটমহল ছিল এবং ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ছিল। ২০১১ সালের জনগণনার অনুযায়ী এসব ছিটমহলে বসবাসরত জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫১ হাজার। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ছিটমহলে ৩৭ হাজার এবং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ছিটমহলের জনসংখ্যা ছিল ১৪ হাজার।

২০১৫ সালের পয়লা আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিটে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের চুক্তি কার্যকর হয়। ১৯৭৪ সালের মে মাসে দুই দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে এই বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে থাকা ছিটমহলগুলো পরস্পরের সঙ্গে বিনিময় করা হয়। এর ফলে বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার ৪৮ একর জমি বৃদ্ধি পায়।

ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ পায় লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি, কুড়িগ্রামে ১২টি, নীলফামারীতে ৪টিসহ মোট ১১১টি ছিটমহল। অন্যদিকে ভারত পায় বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল, যাদের অবস্থান ছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। এর মধ্যে ৪৭টি কোচবিহার ও ৪টি জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত ছিল। এই বিনিময়ের ফলে দুই দেশের মধ্যে থাকা সমস্যার সমাধান হয় এবং ছিটমহলে বসবাসরত মানুষরা তাদের নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকার ফিরে পায়।

ছিটমহল বিনিময়ের আগে ছিটমহলবাসীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হতেন। তারা প্রায়ই নিজেদের নাগরিকত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতেন। ছিটমহল বিনিময়ের পর এই মানুষগুলো তাদের নাগরিকত্ব ও মৌলিক সুবিধাগুলি ফিরে পেয়েছে। তারা এখন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সকল সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে।

ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকে বাংলাদেশের সরকার ছিটমহলবাসীদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ছিটমহল এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ, রাস্তা নির্মাণ এবং অন্যান্য মৌলিক সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

তমাল রায় (৩৫) একজন হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারি ইউনিয়নের পকেটের বাসিন্দা তিনি বলেন, “ছিট মহল সমস্যার সমাধান হলেও এখনো আমাদের এখানে বিদ্যুৎ, পরিবহন এবং মোবাইলের নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত যে জটিলতা গুলো আছে তা এখনো আমাদের জীবনকে সীমিত করে রেখেছে। তাছাড়াও এই সীমান্তবর্তী জায়গায় আমাদের বসবাস হওয়ায় জীবনযাত্রার মানের কোন উন্নয়ন হয়নি শহরের সঙ্গে তুলনায়। আর সব সময় আমাদেরকে একটা ভয় ভীতির মধ্যে জীবন যাপন করতে হয়।”

নিপা রানী (৫৫) একজন প্রাইমারি শিক্ষিকা। তিনি হাতীবান্ধা উপজেলার মধ্য বাড়াই পাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ বংশধর ভারতীয় আর আমাদের বসবাস এ পারে হাওয়ায় আমরা সব সময় একটা উৎকণ্ঠের মধ্যে জীবন যাপন করি। কখন যে কি হয় কারণ এই দিক দিয়ে যে পরিমাণ মাদক এবং অন্যান্য ভারতীয় পণ্যের যাতায়াত হয় তার ফলে প্রশাসনের সবসময় নজরদারির মধ্যে জীবন যাপন করতে হয়।”

ছিটমহল বিনিময় একটি ঐতিহাসিক ঘটনা যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। এই বিনিময়ের ফলে ছিটমহলবাসীরা তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পেয়েছে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। দুই দেশের সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় এই সমস্যার সমাধান হওয়ায় ছিটমহলবাসীরা এখন সুখী ও সুরক্ষিত জীবন যাপন করছে।

এ সম্পর্কিত আরো খবর