বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
৩০ পৌষ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

সারাদেশ

লালমনিরহাটে ভুট্টার বীজের অঙ্কুরোদম না হওয়ায় নকল বীজের অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০৪

লালমনিরহাটে ভুট্টার বীজের অঙ্কুরোদম না হওয়ায় নকল বীজের অভিযোগ

লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলা বর্তমানে এক নতুন আতঙ্কের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই আতঙ্কের নাম হলো ভুট্টার বীজ। কৃষকরা জানাচ্ছেন, গত কিছুদিন ধরে বাজারে বিক্রি হওয়া ভুট্টার বীজগুলোর বেশিরভাগই অঙ্কুরোদম হচ্ছে না, ফলে তাদের জমিতে ভুট্টার বীজ রোপণ করা সত্ত্বেও কোনো ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। এতে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং তারা পুনরায় নতুন বীজ কিনে জমিতে আবারও রোপণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা অভিযোগ করছেন, বাজারে নকল বীজ বিক্রি হওয়ার কারণে এই বিপর্যয় ঘটছে। যদিও বিভিন্ন বীজ কোম্পানি এবং বিক্রেতাদের দোষারোপ করা হচ্ছে, তবে এই অভিযোগে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক তদন্ত বা ঘোষণা এখন পর্যন্ত আসেনি। উপজেলা কৃষি অফিস কিংবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা জানান, তারা চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষে বেশ ভালো ফলনের আশা করেছিলেন। কিন্তু বীজ রোপণের পর অঙ্কুরোদম না হওয়ার কারণে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কৃষকরা জানান, “বীজ রোপণের পর কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কিছুই হয়নি। অনেক বীজ একেবারে অঙ্কুরিত হয়নি। আবার কিছু কিছু বীজ অঙ্কুরিত হলেও তা ঠিকভাবে বেড়ে ওঠেনি। ফলে আমরা হতাশ।”

এক কৃষক, সালাম মিয়া জানান, “এবার যদি ফসল ভালো না হয়, তাহলে আমাদের পুরো পরিবার বিপদে পড়বে। সার, বীজ, শ্রমিকসহ খরচের পরিমাণ অনেক বেশি, কিন্তু ফলন কিছুই হচ্ছে না।”

কৃষকরা অনেকেই দাবি করছেন, বাজারে যে বীজ বিক্রি হচ্ছে, তার বেশিরভাগই নকল বা নিম্নমানের। তারা বলছেন, এসব বীজের গুণগত মান খুবই খারাপ, যা সহজেই অঙ্কুরিত হয় না। একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, তারা বিভিন্ন স্থানীয় দোকান থেকে বীজ কিনেছিলেন, কিন্তু বীজের মান এতটাই নিম্নমানের ছিল যে সেগুলো থেকে কোনো অঙ্কুরোদ আসেনি।

এদিকে, কিছু কৃষক অভিযোগ করছেন যে, বীজ কোম্পানিগুলি তাদের বীজের গুণগত মান নিয়ে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। তারা আরও জানান, একদিকে যেমন বীজের দাম বেশি, অন্যদিকে সারের দামও আকাশচুম্বী। এমন অবস্থায়, কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

ভুট্টা চাষে গড়ে প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকদের খরচ হয় প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে রয়েছে বীজ, সার, শ্রমিকের মজুরি, পানি এবং অন্যান্য উপকরণের খরচ। তবে, বীজ অঙ্কুরিত না হওয়ার কারণে কৃষকরা পুনরায় নতুন বীজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে তাদের খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেক কৃষক জানাচ্ছেন, তারা এখন পুনরায় জমি প্রস্তুত করতে এবং নতুন বীজ রোপণ করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের জন্য একটি অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া, কৃষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ফসলের ক্ষতি ছাড়াও তাদের সময়ও অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। তারা বলছেন, “ফসলের ঠিকঠাক ফলন না হওয়ার কারণে আমরা সময়মতো অন্য ফসলও চাষ করতে পারছি না, যা আমাদের জন্য আরও ক্ষতিকর।”

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলার কৃষি অফিস থেকে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, তারা এখনো বিষয়টি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেননি। তবে, কৃষকরা অভিযোগ করেছেন যে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

একজন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বিষয়টি আমরা জেনে আছি, তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে শীঘ্রই আমরা এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

এদিকে, বিভিন্ন বীজ কোম্পানি অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কিছু কোম্পানি জানিয়েছে যে, তারা প্রতিটি ব্যাচের বীজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাজারে ছাড়ে, তবে কিছু স্থানীয় দোকানদার নকল বা নিম্নমানের বীজ বিক্রি করতে পারে। এসব বীজ কোম্পানির দাবি, তাদের সরবরাহ করা বীজগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়ে থাকে, এবং যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে, তবে তা স্থানীয় বিক্রেতাদের দায়িত্ব।

এছাড়া, কিছু কোম্পানি জানিয়েছে, তারা গুণগত মান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মান নির্ধারণকারী সংস্থার সঙ্গেও কাজ করছে, তবে বাজারে নকল বীজের প্রবাহ তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

বাজারে নকল বীজের সমস্যা সমাধান করতে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। কৃষকদের জন্য বিশ্বস্ত বীজ কোম্পানি ও সরকারি উদ্যোগে সঠিকভাবে মান যাচাই করা বীজ সরবরাহ করা উচিত। এছাড়া, কৃষি অফিসের মাধ্যমে বীজ কোম্পানির গুণগত মান নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং বিক্রেতাদের উপর নজরদারি বাড়ানো উচিত।

এছাড়া, কৃষকদের সচেতন করতে বীজ ও সার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন করা যেতে পারে। সরকারি প্রণোদনা এবং ঋণের সুবিধা দিয়ে কৃষকদের এই বিপর্যয় থেকে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করা যেতে পারে।

লালমনিরহাটের কৃষকরা বর্তমানে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। নকল বীজ এবং অতিরিক্ত খরচের কারণে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে এবং ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি বিভাগের এবং সংশ্লিষ্ট বীজ কোম্পানির উচিত কৃষকদের দুর্দশা কমাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। কৃষকরা যাতে তাদের ফসলের সঠিক মূল্য পায় এবং উৎপাদনে কোনো বাধা না আসে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অবিলম্বে নেওয়া উচিত।

এ সম্পর্কিত আরো খবর