নাটোর প্রতিনিধিঃ
নাটোরে মিথ্যা ষড়ন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেফতার এনায়েত করিম রাঙ্গার মুক্তির দাবীতে স্ত্রী উম্মে সালমা (পাপিয়া) সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।
জুলাই- আগষ্ট বিপ্লবে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সত্বেও শুধুমাত্র আপন ভাতিজার করা প্রতিহিংসামূলক ষড়যন্ত্রের মামলায় ফেঁসে গেলেন চাচা এনায়েত করিম রাঙ্গা। বর্তমানে রাঙ্গা হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলের খাঁচায় বন্দি।
গত ২৮ ডিসেম্বর শনিবার নাটোরের সিংড়া থানা পুলিশ তার নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে।
এনায়েত করিম রাঙ্গা জুলাই-আগষ্টের পুরোটা সময় জুড়ে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন এবং এই আন্দোলনের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নিয়মিত কাজ করছেন। অথচ তার ভাতিজা ফয়সাল আহম্মেদ পারিবারিক কলহের জেরে মিথ্যা ষড়যন্ত্রের মামলায় চাচাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান রাঙ্গার স্ত্রী উম্মে সালমা (পাপিয়া)। এই এনায়েত করিম রাঙ্গা একসময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর ছাত্রনেতা ও ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া পরিষদের আহবায়ক এর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে বিগত ১৫ বছর নানাভাবে পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন।
সোমবার ৩০ ডিসেম্বর নাটোরে এক সংবাদ সম্মেলনে রাঙ্গার স্ত্রী দাবি করেন – তার স্বামী জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওষুধ,পানি, স্যালাইন এবং খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। অথচ তারই নামে ছাত্র হত্যার মিথ্যা মামলা দেয়া হলো।
উম্মে সালমা পাপিয়া বলেন, তার স্বামী রাঙ্গা ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই তার ভাই আবু জাহেল তার অভিভাবক হিসাবে দেখাশোনা করতেন। এনায়েত করিম রাঙ্গার বাবার দুই পরিবার ছিল। অর্থাৎ সৎ মায়ের ঘরের আরো সন্তান আছে। বছর খানেক আগে ২০২৩ সালে রাঙ্গার বড়ভাই আবু জাহেল জমিসংক্রান্ত বিষয়ে সৎ ভাই তৈয়ব আলী কে গুলি করে মারতে গেলে এনায়েত করিম বাঁধা দেন। সেই থেকে দুই ভাইয়ের মধ্যে দন্দ চলছিল। সৎ ভাই তৈয়ব আলীকে গুলি চালানোর ঘটনায় মামলা করলে আবু জাহেল গ্রেফতার হয়ে ২১ দিন কারা ভোগ করেন । পরে জামিনে বেরিয়ে এলে তাদের দ্বন্দ তীব্র আকার ধারন করে। আবু জাহেদের ছেলে ফয়সাল আহম্মেদ বাবাকে জেল খাটানোর পেছনে এনায়েত করিম রাঙ্গার হাত আছে সন্দেহ করে এবং সেই থেকে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকেন। আবু জাহেল সিংড়া থানার ৪ং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
ফয়সাল আহম্মেদ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ প্রতিনিধি ছিলেন বলে জানান তার চাচি পাপিয়া। জুলাই আগস্টের বিপ্লবে ছাত্রদের দমন করতে তার ভূমিকা ছিল। সে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর জুনায়েদ আহম্মেদ পলক এর ঘনিষ্ঠ ভাজনও ছিলেন। এবং পলকের যাবতীয় কাজ দেখাশোনা করতেন। ছোটখাট যেকোন বিষয়ে সে মামলাবাজ হিসাবেও পরিচিত। এই ফয়সাল আহম্মেদ এর অত্যাচারে এলাকা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।
প্রতিশোধের নেশায় ফয়সাল ১৩ আগষ্ট ঢাকায় পারিবারিক ভাবে তার বাবা আবু জাহেলের নামে মামলা ৭ দিনের মধ্যে তুলে নেওয়ার হুমকী দেয় রাঙ্গা ও তার পরিবারকে। কিন্তু এনায়েত করিম রাঙ্গা’র ভাষ্য ছিল মামলার বাদী তো আমি না। এতে ফয়সাল আহম্মেদ তাদেরকে ঢাকা থেকে তারিয়ে দিবে বলে হুশিয়ারী দেয়। এবং ১৩ আগষ্ট ঢাকার কলাবাগান থানায় এনায়েত করিম রাঙ্গার নামে একটি মিথ্যা মামলা করেন ফয়সাল আহম্মেদ। এরপর ১৮ আগষ্ট ফয়সাল আহম্মেদ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র বন কে সাথে নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার সময় এনায়েত করিম রাঙ্গার হাতিরপুল এলাকার বাসার সমানে দোকানে দোকানে রাঙ্গার ছবি দেখিয়ে ডিবি পরিচয়ে তাকে খুজতে থাকে এবং রাঙ্গা একজন সন্ত্রাসী তার নামে গণহত্যার মামলা করা হবে সে কোন বাসায় থাকে চিনিয়ে দিতে বলেন ফয়সাল আহম্মেদ। এর কিছুদিন পর অক্টোবর মাসে এনায়েত করিম রাঙ্গার গ্রামের বাড়ি নাটোরের সিংড়ায় পুলিশ যায। ঢাকার সূত্রাপুর থানার একটি হত্যা মামলার তদন্তে। সেই মামলার ১নং আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ২য় ওবায়দুল কাদের, ৩য় জাহাঙ্গীর কবির নানক পর্যায়ক্রমে ৫০ নং এনায়েত করিম রাঙ্গা। এভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলায় হতবিম্ব হয়ে পড়েন রাঙ্গা র পরিবার। পুলিশি পরামর্শে আশ্বস্ত হন কোন মিথ্যা মামলা হলে তা তদন্ত করে সুরাহা করা হবে। কিন্তু এর কয়েকদিন পার না হতেই হঠাৎ আবার ডিসেম্বর ১৮ তারিখে ঢাকার বনানী থানায় আরেকটি হত্যা মামলায় আসামী করা হয় এনায়েত করিম রাঙ্গা কে।
এরই মধ্যে গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ঢাকা থেকে এনায়েত করিম রাঙ্গা তার নিজ গ্রাম নাটোরের সিংড়ায় আসেন এবং গত ২৮ ডিসেম্বর শনিবার রাতে সিংড়া থানার পুলিশ এনায়েত করিম রাঙ্গা কে তার বাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে।
এই মিথ্যা মামলায় এনায়েত করিম রাঙ্গা কে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে তার স্ত্রী উম্মে সালমা (পাপিয়া) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দাবি করেন, তার স্বামী কখনোই আওয়ামিলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত না এবং কোন হত্যার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহযোগীরা ভূমিকায় সক্রিয় ছিলেন। এবং আমি ও আমার ছোট মাসুম সন্তানও ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাঠে থাকা একজন প্রতিবাদী নারী যোদ্ধা ছিলাম।
ফয়সাল আহম্মেদ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সদস্য হয়েও শুধুমাত্র পারিবারিক দ্বন্দের প্রতিশোধ নিতে নিজেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার সুবাদে তার সাথে সমন্বয়ক সার্ভিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্পর্ক আছে নাম ভাঙ্গিয়ে নিরীহ মানুষ কে হয়রানী ও হুমকী ধামকী দিয়ে বেড়াচ্ছে। এবং মিথ্যা মামলাবাজী করছে।
উম্মে সালমা (পাপিয়া) এই মিথ্যা ষড়যন্ত্র মূলক মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সহ সমন্বয়ক সার্ভিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ মহোদয়ের সুচিন্তিত সহযোগিতা কামনা করেছেন।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?