শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

পরীক্ষামূলক সংস্করণ

সারাদেশ

২ কোটিতে ভিসি, ৫০ লাখে অধ্যক্ষ পদ বিক্রি করতেন দীপু মনি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গত ১১ বছরে পররাষ্ট্র, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে। তার সময়ে শিক্ষা খাতে দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে যায় সব স্তরে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীপু মনি দেশের পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কুক্ষিগত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। […]

নিউজ ডেস্ক

২১ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৩

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গত ১১ বছরে পররাষ্ট্র, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে। তার সময়ে শিক্ষা খাতে দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে যায় সব স্তরে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীপু মনি দেশের পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কুক্ষিগত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দীপু মনির বিষয়ে খোঁজ রাখেন এমন অনেকে বলছেন, মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ পর্যন্ত তার হাত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগের জন্য দুই কোটি এবং কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য তিনি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন। তার সময়ে শিক্ষা খাতে এটি ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। এসব দুর্নীতি-অনিয়ম সম্পর্কে জানলেও ভয়ে মুখ খোলেননি তার মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।

দীপু মনি ক্ষমতায় থাকাকালে দুইজন সচিবের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা এসব বিষয় জানলেও আওয়ামী সরকারে দীপু মনির দাপটের কারণে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি। দীপু মনির ভাই ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপুর মাধ্যমে হতো সব নিয়োগ ও পদায়ন। বিভিন্ন কাজে বিতর্কের জন্ম দেওয়ায় একপর্যায়ে তার দপ্তর থেকে অন্যত্র চলে যান তৎকালীন এক সচিব। এছাড়া, নিজ থেকে চলে যান দীপু মনির একান্ত সচিবও (পিএস)।

দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে তার ভাই টিপুর মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের এক বিশাল রাজত্ব কায়েম করেন। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি ও কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি। মধ্যম সারির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ভিসি নিয়োগে তিনি নিতেন দুই কোটি টাকা, আর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে নিতেন ৫০ লাখ টাকা

সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের চার মেয়াদের মধ্যে তিন মেয়াদে ভিন্ন তিনটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন দীপু মনি। এর মধ্যে পররাষ্ট্র ও শিক্ষায় পূর্ণকালীন মেয়াদ শেষ করেন। সর্বশেষ সরকারে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পালন করেন। তিন মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় তিনি ও তার ভাই টিপু নানা বিতর্কের জন্ম দেন। রাজধানী কলাবাগান ও বনানীতে ছায়া অফিসের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীপু মনি নিজে ও তার স্বজনরা জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতিতে।

দুই কোটিতে ভিসি, ৫০ লাখে প্রিন্সিপাল পদায়ন

দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে তার ভাই টিটুর মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের এক বিশাল রাজত্ব কায়েম করেন। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি ও কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি। মধ্যম সারির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ভিসি নিয়োগে তিনি নিতেন দুই কোটি টাকা, আর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে নিতেন ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া, শিক্ষা প্রশাসনে প্রতিটি বদলিতে তার ভাইয়ের হাতে ছিল পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকায় বেচাবিক্রি হতো শিক্ষা প্রশাসনের নানা পদ।

১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা ও রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত একটি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল নাম প্রকাশ না কৃরার শর্তে বলেন, আমাকে এই কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসতে ৫৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। প্রথমে একজন মন্ত্রীর ডিও লেটার নিয়ে গেলে শিক্ষামন্ত্রী দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। এরপর শুনতে পারি অন্য আরেকজন তার ভাই টিপুর সাথে যোগাযোগ করছে। বিষয়টি মন্ত্রীকে জানাতে একাধিবার সাক্ষাৎ চেয়েও পাইনি। পরে তার ভাইয়ের কাছে গেলে তিনি আমাকে বলেন, ডিও লেটার দিয়ে কি প্রিন্সিপাল হতে পারবেন? এরপর অন্য আরেকটি মাধ্যমে ৫৫ লাখ টাকায় দফারফা হয়।

চট্টগ্রামের বিভাগের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে পদায়ন করতে দুই কোটি টাকা নেন তার ভাই টিপু। নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সুপারিশ আসার পর টিপু অন্য একজনের মাধ্যমে জানান, ভিসি হওয়ার জন্য ২ কোটি টাকা দিতে রাজি আছেন কয়েকজন। তদবির করে লাভ নেই।

চট্টগ্রামের বিভাগের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে পদায়ন করতে দুই কোটি টাকা নেন তার ভাই টিপু। নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সুপারিশ আসার পর টিপু অন্য একজনের মাধ্যমে জানান, ভিসি হওয়ার জন্য ২ কোটি টাকা দিতে রাজি আছেন কয়েকজন। তদবির করে লাভ নেই। আপনার অধীনে একটি নিয়োগ দিয়েই তো এই টাকা ওঠানো সম্ভব- এমন পরামর্শ দিলে শেষ পযন্ত ওই ভিসি টাকা দিতে রাজি হন।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু ঢাবি, রাবি, চবি, জাহাঙ্গীরনগর বাদে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে কমবেশি আর্থিক লেনদেন হয়েছে। শেষ সময়ে ‘২ কোটি দাও ভিসি হও’- এমন একটি কথা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে ওঠেন ভিসিরা।

ইউজিসির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের কোনো নজির ছিল না। কিন্তু দীপু মনি সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

সচিব ও পিএস স্বেচ্ছায় চলে যান

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, দীপু মনির সঙ্গে কাজ করা তৎকালীন একজন সচিব তার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অন্যত্র চলে যান। যদিও তিনি এখন প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আসীন রয়েছেন। এছাড়া, দীপু মনির সঙ্গ ছাড়েন তার তৎকালীন পিএসও।

শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে ২০২২ সালে শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ-সাউথ ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তনের নামে আসলে এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় একটি চক্র। এর নেপথ্যে ছিলেন দীপু মনি /জানতে চাইলে ওই সচিব বলেন, অন্য মন্ত্রণালয়ে চলে এসেছি, সেটি সরকারই আমাকে পাঠিয়েছে।

তার (দীপু মনি) সাবেক পিএস ও বর্তমানে সরকারি কর্মকমিশনের যুগ্ম সচিব ড. আব্দুল আলীম বলেন, আমি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর চলে আসি। দীপু মনির ভাইয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাড়ে তিন বছর পিএস থাকাকালে তার সাথে আমার তিনবার দেখা হয়েছে। তাই ওনার বিষয়ে আপনি যা শুনেছেন, আমিও তাই। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেন দীপু মনি

শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে ২০২২ সালে শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ-সাউথ ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তনের নামে আসলে এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় একটি চক্র। এর নেপথ্যে ছিলেন দীপু মনি। আওয়ামী লীগের মেয়র, ব্যবসায়ী, আমলা, শিক্ষাবিদদের দিয়ে নতুন করে গঠন করা হয় নর্থ-সাউথ ও মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড। এরপর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও এভাবে বেদখল হয়।

বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি বেদখলের উদ্যোগ নিয়েও শেষ করতে পারেননি দীপু মনি। ২০২৪ সালে নির্বাচনের পর তাকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় বেদখলের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। যদিও তা শেষ করতে পারেননি তিনি।

নিজ জেলায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুধু জমি অধিগ্রহণে ৩৫৯ কোটি টাকা দুর্নীতির পাঁয়তারা করেন দীপু মনি। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেন তার নিকট আত্মীয়রা।

একইভাবে রাজধানী ঢাকার গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ দখল করতে চান সমালোচিত এই শিক্ষামন্ত্রী। তিনি অযাচিত হস্তক্ষেপ করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে কয়েকবার উদ্যোগ নেন। এরপর প্রতিষ্ঠানটির সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শেষে উচ্চ আদালতে শরণাপন্ন হয়ে রক্ষা পায় প্রতিষ্ঠানটি।

স্কুল-কলেজ ভবন নির্মাণে ৫ শতাংশ কমিশন

শিক্ষার উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্দ পায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। এই অধিদপ্তরটি সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনগুলোর সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কার এবং আসবাবপত্র সরবরাহের কাজ করে থাকে। এছাড়া, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, আইসিটি ল্যাব স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ, আইসিটি-সুবিধা সরবরাহের কাজও তারা করে থাকে। শিক্ষার উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ এ দপ্তরের জন্য বরাদ্দ থাকে। এ খাতে সব ঠিকাদারকে ৫ শতাংশ কমিশন দিয়ে কাজ নিতে হতো। ইইডি’র পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল দীপু মনির ভাই টিপুর হাতে।

৩৫৯ কোটি টাকা দুর্নীতিতে চাঁদপুরে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

নিজ জেলায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুধু জমি অধিগ্রহণে ৩৫৯ কোটি টাকা দুর্নীতির পাঁয়তারা করেন দীপু মনি। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেন তার নিকট আত্মীয়রা। তারা ভূমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক অনুমোদনের আগেই চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে জায়গা ঠিক করে নিজেদের নামে দলিল করিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে সেসব জমিই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন করে এবং জেলা প্রশাসনকে অধিগ্রহণের জন্য বলে।

সেখান থেকে ৩৫৯ কোটি অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এই অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস। তিনি চাঁদপুরে দীপু মনির ভাইসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর জমি দখলের বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য আলোচিত ছিলেন। টিপুসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ভুয়া দলিলের মাধ্যমে ৪৮ একরের বেশি জমির দখল নেওয়ার প্রতিবাদ জানানোর ৪৮ ঘণ্টা পর তাকে নেত্রকোণায় বদলি করা হয়।

চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনেও চোখ ছিল দীপু মনির। তার খাস লোক হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সেলিম খানকে সেই বালু তোলার লিজ দেন তিনি। চাঁদপুরে মেঘনা নদী থেকে সেলিম খানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু তোলার প্রতিবাদ যারাই করেছেন তারাই দীপু মনির রোষানলে পড়েছেন।

মুখে নোট গাইড বইয়ের বিরোধিতা করলেও দীপু মনি নোট-গাইড বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কাজে তাকে সহায়তা করতেন একজন প্রকাশনীর মালিক। সেই প্রকাশনীর মালিকের বাড়ি চাঁদপুরে সম্প্রতি গণপিটুনিতে ছেলেসহ নিহত হন চাঁদপুরের সেই চেয়ারম্যান সেলিম খান। তার অবৈধ বালু উত্তোলন সম্রাজ্যের মদদদাতা ছিলেন দীপু মনি। এ কারণে খোদ জেলা আওয়ামী লীগ নেতারাই বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন এ দুজনের দিকে।

চাঁদপুর জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সেলিম খান একসময় ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি দীপু মনির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং তখনই মেঘনা থেকে বালু তুলতে শুরু করেন। বছরের পর বছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সেলিম খানকে বলা হতো ‘বালুখেকো সেলিম’।

নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বালু তোলার সমালোচনা করে পদ হারান। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবসের আলোচনায় তিনি বলেন, মেঘনায় অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছেন, তাদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে। এর দুইদিন পরই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

সরকারি খাস জমিতে দীপু মনির ভাইয়ের ‘টিপু নগর’

নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরে বিপুল পরিমাণ খাসজমি নিজের কবজায় নিয়ে দীপু মনির ভাই টিপু তৈরি করেন মাছের ঘের, গবাদি পশুর খামার ও সবজি বাগান। কেবল সরকারি জমির ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেননি, ওই এলাকার নাম বদল করে নিজের নামে রেখেছেন ‘টিপু নগর’।

নোট ও গাইড বই থেকে তিন মাস অন্তর ২৫ কোটি টাকার কমিশন

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, নোট গাইড বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও সারা দেশে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এসব বই। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী নোট বা গাইডের ওপর নির্ভরশীল। মুখে নোট গাইড বইয়ের বিরোধিতা করলেও দীপু মনি নোট-গাইড বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কাজে তাকে সহায়তা করতেন একজন প্রকাশনীর মালিক। সেই প্রকাশনীর মালিকের বাড়ি চাঁদপুরে।ঢাকার এক নোট-গাইড প্রকাশক জানান, তিন মাস পরপর অন্তত ২৫ কোটি টাকা কমিশন নিতেন দীপু মনি।

সারাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত, ভারতীয় গুলিবিদ্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মাদলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

নিউজ ডেস্ক

০৫ মে ২০২৫, ১৬:১৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মাদলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

রোববার (৪ মে) রাত প্রায় পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের মাদলা সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোরের নাম মো. সাকিব (১৮)। তিনি কসবায় নন্দনগর গ্রামের বাসিন্দা এবং মো. মোতালেব মিয়ার ছেলে।

কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জানান, রাতে বিএসএফ সদস্যদের ছোড়া গুলিতে সাকিব গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। একই সময় এক অজ্ঞাতনামা ভারতীয় নাগরিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয় এবং বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছামিউল ইসলাম জানান, মাদলা সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোর ও ভারতীয় নাগরিককে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বিএসএফ। তিনি বলেন,

“গুলিতে সাকিব নিহত হয় এবং অপর ভারতীয় নাগরিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বাংলাদেশে চলে আসে।”

ঘটনার বিষয়ে ইউএনও আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সাকিব ও আহত ভারতীয় ব্যক্তি একটি মোটরসাইকেল চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে।

এদিকে, সীমান্তে কিশোর নিহত ও অন্য একজনের গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

ঘটনাটি সম্পর্কে বিজিবি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি, তবে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

সারাদেশ

মুরাদনগরে দরজা ভেঙে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, কী ঘটেছিল

কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন ওই নারী। পরে মামলার মূল আসামি ফজর আলীকে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (২৯ জুন) সকালে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার। মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে […]

মুরাদনগরে দরজা ভেঙে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, কী ঘটেছিল

মুরাদনগরে দরজা ভেঙে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, কী ঘটেছিল

নিউজ ডেস্ক

২৯ জুন ২০২৫, ০৯:৩৫

কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন ওই নারী। পরে মামলার মূল আসামি ফজর আলীকে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (২৯ জুন) সকালে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার।

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি তার বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন।

ওই নারী বলেন, টাকা ধার নেওয়া নিয়ে ফজর আলীর সঙ্গে তাদের পরিবারের পরিচয় ঘটে। এ সূত্র ধরেই ফজর আলী বাড়িতে প্রবেশ করে।

মুরাদনগরে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলী গ্রেপ্তারমুরাদনগরে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলী গ্রেপ্তার
ওই নারীর পাশের বাড়ির এক সদস্য বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসি। লোকজন গিয়ে দেখেন দরজা ভাঙা। পরে আমরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ঘটনার সময় ফজর আলীকে স্থানীয় লোকজন আটকে মারধর করেন। পরে তাকে কুমিল্লা শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতাল থেকে ফজর আলী পালিয়ে যান। পরে আজ তাকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ফজর আলীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। বাদির স্বাস্থ্য পরীক্ষাও শেষ।

এর পরই নারীকে ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল করা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (২৯ জুন) রাত দেড়টার দিকে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান স্বাক্ষরিত সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। পরে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কুমিল্লা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৬ জুন রাতে মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর পাঁচকিত্তা গ্রামের ফজর আলী একজন প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে এলাকার লোকজনের হাতে আটক ও প্রহৃত হন। পরবর্তী সময়ে আহত ফজর আলী সেখান থেকে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু লোক তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিমের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

সারাদেশ

সৈনিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, পাশেই ছিল বিশেষ চিরকুট

ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে প্রহরীর সঙ্গে বের হয়েছিলেন সৌরভ। কিন্তু দীর্ঘ সময় সাড়া না পেয়ে প্রহরীরা ও গার্ড কমান্ডার খুঁজতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে দেখা যায়, ওয়াশরুমের জানালা খোলা। পরে ওয়ার্কশপ ভবনের পাশে কনস্ট্রাকশনের বাঁশের সঙ্গে গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।

সৈনিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, পাশেই ছিল বিশেষ চিরকুট

ছবি সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক

০১ জুন ২০২৫, ১৯:৪৬

গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে এক মর্মান্তিক ঘটনার অবসান হলো রোববার (১ জুন) ভোরে। সেনানিবাসের ওয়ার্কশপ ভবন থেকে সৈনিক এসএম সৌরভ হোসেনের (৩৪) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

সৌরভ হোসেন ঝিনাইদহ জেলার গাড়াগঞ্জ গ্রামের উজির আলী মোল্লার ছেলে। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন। জানা যায়, কিছুদিন আগে বগুড়া সেনানিবাস থেকে রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে এমপি (এপিসি) স্কট হিসেবে বদলি হয়েছিলেন।

পুলিশ জানায়, সম্প্রতি অনলাইন জুয়া খেলায় সর্বস্বান্ত হয়ে মানসিক চাপে ছিলেন সৌরভ। রোববার গোপনে ল্যান্স করপোরাল ইয়াসির আরাফাতের মোবাইল থেকে ১৪ হাজার টাকা বেটিং সাইটে জমা দেন। ইয়াসির আরাফাত বিষয়টি টের পেয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং লোকজন ডাকাডাকি করলে সৌরভকে শাস্তিস্বরূপ নজরবন্দি রাখা হয়।

ভোরে ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে প্রহরীর সঙ্গে বের হয়েছিলেন সৌরভ। কিন্তু দীর্ঘ সময় সাড়া না পেয়ে প্রহরীরা ও গার্ড কমান্ডার খুঁজতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে দেখা যায়, ওয়াশরুমের জানালা খোলা। পরে ওয়ার্কশপ ভবনের পাশে কনস্ট্রাকশনের বাঁশের সঙ্গে গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।

মরদেহের পাশে একটি বিশেষ চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে আত্মহত্যার কারণ লিখে গেছেন বলে পুলিশ জানায়। মরদেহটি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।

এ ঘটনায় সেনানিবাস ও পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আত্মহত্যার পেছনের কারণগুলো খতিয়ে দেখছে পুলিশ।