রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের বাইরে সারি সারি ওত পেতে দাঁড়িয়ে দালালচক্র। এসব দালাল গ্রাহকের হাতের কাগজ কৌশলে নিয়ে দ্রুত কাজ করে দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। শুধু দালাল চক্রই নয়, পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসাররাও ‘কুইক’ কাজ করে দেওয়ার নামে কৌশলে সেবাগ্রহীতাদের পকেট কাটছেন।
আর এসব কিছুর মূলে রয়েছে পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তা। তারা নানা ছুতোয় গ্রাহকদের দুর্ভোগে ফেলছেন। তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই সেবাগ্রহীতরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দালাল, আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে দ্রুত কাজ করে নিচ্ছেন। সবকিছু মিলে যেন সেবাগ্রহীতা এসব দালাল-আনসার আর পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মচারীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। গত তিন দিনে রাজশাহীর বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যারা পাসপোর্ট করাতে চান, এখানে তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। দিনের পর দিন ঘুরানোর রেকর্ডও রয়েছে। কিন্তু এসব দেখার যেন কেউ নেই। একাধিক সেবাপ্রার্থী জানান, এ অফিসের আনসার সদস্যসহ অন্যরাও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।
দালালের পাশাপাশি প্রকাশ্যেই আনসার সদস্যরাও টাকা নিয়ে কাজ করে দেন। আবেদনের জন্য আজ সার্ভারের সমস্যা, কাল নেটওয়ার্কের সমস্যা এমন নানা অজুহাত দেখিয়ে ঘুরাতে থাকেন। তবে দালালকে ১৫০০ টাকা দিলে সহজেই কাজ হয়ে যায়।
গ্রাহক সেজে গত বুধ, বৃহস্পতি ও রোববার (১ ডিসেম্বর) এসব দালাল ও আনসারের সঙ্গে কথা বললে সাধারণত পাঁচ বছরের জন্য পাসপোর্ট করলে আমরা মোট ৬ হাজার টাকা নিই। এই টাকা দিলে আপনাকে কিছুই করতে হবে না। যাবেন ছবি তুলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেবেন, চলে আসবে।
৪ হাজার ২৫ টাকা লাগে ব্যাংক ড্রাফট করতে। অফিসকে দিতে হয় ১২০০ টাকা আর আমার থাকবে ৫০০ টাকা। ডজনখানেক দালাল অফিসের কর্মচারীদের যোগসাজশে কাজ করে যাচ্ছে। এভাবেই একজন দালাল দিনে চার থেকে পাঁচটি কাজ করে। সে হিসেবে শুধু দালালি করেই দিনে আয় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা।
শুধু দালালরাই নয়, পাসপোর্ট অফিসের প্রধান ফটকের দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশ সদস্যরাও গ্রাহকদের ফটকে আটকিয়ে তাদের সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করছেন। কৌশলে তারাও দালালদের মতো টাকার বিনিময়ে কাজ করে দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রতিবেদক প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেন।
অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’