রূপসাতে (খুলনা) নয়, ভোলা থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রকৃতিক গ্যাস) আসবে নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটে। ভোলার উদ্বৃত্ত গ্যাস এলএনজি আকারে নদীপথে এনে রিগ্যাসিফিকেশন করে পাইপলাইনের দেওয়ার বিষয়টি অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র।
প্রথম দিকে রূপসা বিদ্যুৎকেন্দ্রে এলএনজি সরবরাহের আলোচনা সামনে এসেছিল।
ভোলার কোন পয়েন্ট থেকে গ্যাস দেওয়া হবে সেটি চূড়ান্ত করার জন্য সরেজমিন পরিদর্শন করেন পেট্রোবাংলার উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম। পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপরেশন অ্যান্ড মাইন্স) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ওই টিমের নেতৃত্ব দেন।
টিমটি ১৭ জানুয়ারি ভোলা পরিদর্শন করে, বোরহান উদ্দিন ও ভোলা খেয়াঘাট পয়েন্ট থেকে গ্যাস দেওয়ার স্থান প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছেন বলে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
সারাদেশে যখন গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে আমদানি করেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ঠিক সেই সময়েও ব্যবহার না থাকা দ্বীপজেলা ভোলায় উদ্বৃত্ব গ্যাস পড়ে রয়েছে।
ভোলায় দু’টি গ্যাসফিল্ডে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে। যা দিয়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। ৯টি কূপের মধ্যে ৫টি এখনই গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম রয়েছে যেগুলো থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সেখানে গ্যাসের চাহিদা না থাকায় মাত্র ৮০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে বর্তমানে। অপর ৪টি কূপের মধ্যে ১টির পাইপলাইন এবং ৩টি কূপের প্রসেস প্লান্ট রেডি হচ্ছে।
ভোলার গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে আনার জন্য বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। কিন্তু নানান কারণে ভোলা-বরিশাল- খুলনা পাইপলাইনের অগ্রগতি সামান্যই। সবেমাত্র ভোলা-বরিশালের প্রাক সমীক্ষা শেষ হয়েছে। ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা নিতে গেলে ১৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন দরকার।
তাতে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচের প্রাক্কলন করা হয়েছে। ৭ হাজার কোটি টাকার জন্য যখন পাইপলাইন আটকা, তখন এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ৬৪৯ কোটি টাকা (আগস্টের দরপত্র)। যা দেশের ১ দিনের চাহিদার (৩০০০ মিলিয়ন) সমান।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পাইপলাইনের পরিবর্তে সিএনজি আকারে আনার জন্য বেশি জোর দেয়। ভোলার উদ্বৃত গ্যাস সিএনজি আকারে আনতে ২০২৪ বছরের ২১ মে ইন্ট্রাকো রিফুলিং স্টেশন পিএলসির সঙ্গে প্রথমে ৫ মিলিয়ন ও দ্বিতীয় ধাপে আরও ২০ মিলিয়ন গ্যাস সিএনজি আকারে সরবরাহের চুক্তি করে সরকার।
প্রথম ধাপের চুক্তি অনুযায়ী দৈনিক সর্বোচ্চ ৩ মিলিয়ন সরবরাহ দিয়েছে কোম্পানিটি। যা গড়ে দেড় থেকে দুই মিলিয়ন গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি শিল্পকারখানায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
এতে প্রতি ঘনমিটারে পরিবহন খরচ ৩০.৬০ টাকাসহ গ্যাসের দাম দাঁড়াচ্ছে ৪৭.৬০ টাকা। যা পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাসের তুলনায় দেড়গুণের মতো। দ্বিতীয় ধাপের ২০ মিলিয়ন যথাসময়ে (অক্টোবর ২০২৪) সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। যে কারণে চুক্তি বাতিল করার চিঠি দিয়েছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি।
এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে সামাল দেওয়াকে বিপদজনক বিকল্প হিসেবে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। আকাশচুম্বি দাম যেমন বাঁধা, তেমনি চাইলেই ইচ্ছামতো আমদানির পরিমাণ বাড়ানো সুযোগ নেই।
দুটি এফএসআরইউ দিয়ে দৈনিক সর্বোচ্চ ৯০০ মিলিয়ন আমদানি করা সম্ভব। নতুন এফএসআরইউ করতে গেলে দরপত্র চূড়ান্ত করার পর কমপক্ষে ১৮ মাস লাগবে। অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলএনজি আমদানি বাড়ানোর কোনো পথ খোলা নেই, দামের ইস্যু বাদ দিলেও।
যখন এক-চতুর্থাংশ আমদানি করতে ত্রাহী অবস্থা, সেই সময়ে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসছে, এতে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে উৎপাদন। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতো ১৮ জানুয়ারি ১৯২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে।