যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় ৭৩ মিলিয়ন ডলারের নতুন আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) জানিয়েছে যে এই অর্থ সহায়তা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, “ডাব্লিউএফপি এর মাধ্যমে এই খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা দশ লাখেরও বেশি মানুষকে প্রদান করা হবে।” এই সহায়তা মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ এবং আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ও জাতিসংঘের সহযোগিতায় বিতরণ করা হবে।
এই উদ্যোগকে মানবিক সহায়তার একটি বড় অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্রের এই আর্থিক অনুদান।
বর্তমানে বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। প্রতিবেশী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানের দায়িত্ব বহন করছে বাংলাদেশ। শুধুমাত্র গত বছরেই মিয়ানমার থেকে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছিল।
শরণার্থী শিবিরগুলোর ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানকারী বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খাদ্য রেশন শরণার্থীদের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বজায় রাখতে সহায়তা করবে। কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে এই জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচিগুলো দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা যায়।”
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য খাদ্য সহায়তা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও তহবিলের ঘাটতির কারণে রেশন কিছুটা কমানো হয়েছে। সংশোধিত ব্যবস্থায়, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে প্রত্যেক শরণার্থী প্রতি মাসে ১২ ডলার পাচ্ছেন, যা আগে ছিল ১২ দশমিক ৫০ ডলার।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক ১২ ডলার এবং ভাসানচরে অবস্থানরতদের জন্য ১৩ ডলার বরাদ্দ করা হচ্ছে।
চলতি মাসের শুরুতে ডব্লিউএফপি সতর্ক করেছিল যে, জরুরি আর্থিক সহায়তার অভাবে এপ্রিল মাসে খাদ্য রেশন অর্ধেক করে জনপ্রতি মাত্র ৬ ডলার করা হতে পারে। ২০২৩ সালেও একই রকম হ্রাস করা হয়েছিল এবং সেই সময়ে রেশন জনপ্রতি ৮ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছিল। অপুষ্টির তীব্র বৃদ্ধি ঘটায় পরে তা আবার বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলারে ফিরিয়ে আনা হয়।
ডব্লিউএফপির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা দাতাদের কাছ থেকে সময়োপযোগী অনুদানের মাধ্যমে তহবিলের ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি।” তবে এই অনুদানের বিস্তারিত তথ্য তিনি জানাননি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন সহায়তা রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে, বাংলাদেশের জন্য এই অর্থ সহায়তা দেশের ওপর শরণার্থীদের চাপ কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?