প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা সীমাহীন দুর্নীতি। স্বৈরাচারী সরকার এই দুর্নীতিকে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে নিয়ে গেছে। দুর্নীতির ফলে শুধু যে সবকিছুতে অবিশ্বাস্য রকম ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নয়, এর কারণে সরকার ও জনগণের সকল কর্মকাণ্ড বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি দমনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার সকল কাজ দুর্নীতিমুক্ত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। এই সরকারের মেয়াদকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার চেষ্টার পাশাপাশি আগামী দিনেও দেশের নাগরিকদের যেন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখা যায়, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, “পুরো বিশ্ব বুঝে গেছে, আমরা জাতি হিসেবে সততার পরিচয় বহন করতে পারছি না। এটি শুধু জাতীয় কলঙ্কের বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এটি আত্মঘাতী। দেশবাসীর মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায় আমরা দুর্নীতিমুক্ত হই। কারণ তারা আমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চায়। কিন্তু দুর্নীতিমুক্ত হতে না পারলে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই চলবে না। দুর্নীতি থেকে মুক্ত হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের কোনো বিকল্প পথ নেই।”
দুর্নীতি প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সরকারি কাজের ডিজিটালাইজেশনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “দুর্নীতি ও হয়রানি রোধে আমরা একটি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। সরকারের সঙ্গে দৈনন্দিন, মাসিক বা বার্ষিক রুটিন কাজের জন্য যেন কোনো নাগরিককে সশরীরে কোনো সরকারি অফিসে উপস্থিত হতে না হয়। দুর্নীতি প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সরকারি সব অফিসে ই-ফাইলিং চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু হলে দুর্নীতি কমে আসবে। এতে করে কোন অফিসের কোন ডেস্কে কোন ফাইল আটকে আছে তা সহজেই জানা যাবে।”
তিনি বলেন, “সরকারি কার্যক্রমে অনলাইন সেবা চালু করার ব্যাপারে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। জনগণের সুবিধার্থে সরকারি সেবাগুলোকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। যাতে করে নাগরিকরা তাদের সেবা সহজেই পেতে পারে এবং দুর্নীতির শিকার হতে না হয়। সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে অসহায় নাগরিকদের টুঁটি চেপে ধরে অবিশ্বাস্য পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। আমরা এই ভোগান্তির অবসান ঘটানোর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
অধ্যাপক ইউনূস জনগণের কাছে এই অনলাইন সেবাকে আরও সহজ করার ব্যাপারে পরামর্শ আহ্বান করেন। তিনি বলেন, “অনলাইনে সেবা পাবার পদ্ধতিটি কীভাবে আরও সহজ করা যায়, সে ব্যাপারে আমাদের কাছে পরামর্শ জানিয়ে লিখুন, ই-মেইল করুন। আপনি বা আপনার পরিবারের যে কেউ এই সেবা বাণিজ্যিকভাবে দিতে চাইলে, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে এই সেবা দিতে পারবেন।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্দেশ্যে প্রযুক্তির ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তবে সমালোচকরা মনে করছেন, শুধু ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু করলেই দুর্নীতি নির্মূল হবে না। এই লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, প্রশাসনিক সংস্কার এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও অত্যন্ত জরুরি।
অধ্যাপক ইউনূস তার ভাষণের শেষাংশে দেশবাসীকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা যে দেশকে স্বপ্ন দেখছি, সেই দেশ গড়ার জন্য আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। দেশের জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম সফল হবেই।”

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?