যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের (র) বিরুদ্ধে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতের পাশাপাশি কমিউনিস্টশাসিত ভিয়েতনামেও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিয়েতনামকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা সত্ত্বেও ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই কমিশন একটি দ্বিদলীয় মার্কিন সরকারি উপদেষ্টা সংস্থা, যা বিদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং নীতিগত সুপারিশ প্রদান করে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবেলার কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করেছে। সে কারণে ভারতের মানবাধিকার ইস্যুগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বৈষম্যের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নির্বাচনী প্রচারের সময় মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক বক্তব্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে মোদি মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে অভিহিত করেন এবং অভিযোগ করেন, তারা বেশি সন্তান জন্ম দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনগুলোতেও ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ভারত এসব প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে নাকচ করেছে।
ভারতের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে যে, দেশটির বর্তমান সরকার বৈষম্যের অভিযোগকে মেনে নেয় না। বরং তারা দাবি করছে যে, বিদ্যুতায়ন ও ভর্তুকি প্রকল্পের মতো নীতিগুলো সব সম্প্রদায়ের জন্য সমানভাবে উপকারী।
ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রতিবেদনে ২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগও উল্লেখ করা হয়েছে। যা দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সম্ভাবনা কম। কারণ কমিশনের সুপারিশ বাধ্যতামূলক নয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এশিয়ায় কৌশলগত অংশীদার হিসেবে গণ্য করে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যর্থ হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দেশটির আদালত সাবেক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। কিন্তু ভারত সরকার শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এবং এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইউএসসিআইআরএফ তাদের প্রতিবেদনে মার্কিন সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে যে, ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক এবং বিকাশ যাদব ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ওপর লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।
মানবাধিকার কর্মীরা ভারতের সংখ্যালঘুদের দুর্দশার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সেখানে ঘৃণাত্মক বক্তব্যের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও যে নাগরিকত্ব আইনকে ‘মূলত বৈষম্যমূলক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করা, ধর্মান্তরবিরোধী আইন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল এবং মুসলমানদের মালিকানাধীন সম্পত্তি ধ্বংসের মতো ঘটনাগুলোও ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য গুরুতর সংকট তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভিয়েতনামে একটি নতুন ডিক্রি জারি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় সংগঠনগুলোর আর্থিক লেনদেনের হিসাব জানতে পারবে এবং অস্পষ্ট ‘গুরুতর অপরাধের’ অজুহাতে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড স্থগিত করতে পারবে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৮০ জনেরও বেশি বন্দির নাম যুক্তরাষ্ট্রের ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য কারাবন্দি’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাদের ভিয়েতনাম সরকার ধর্মীয় কার্যক্রম বা ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার জন্য শাস্তি দিয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ভিয়েতনামের দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। একইভাবে, ভারতীয় দূতাবাসও এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?